যত কান্ড বাদুড় নিয়ে
পরিবেশগত গুরুত্বের পাশাপাশি বাদুড়ের অন্যরকম ভূমিকার কথা নিয়ে ভাবা যাক ৷ এই মূহুর্তে বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ‘কোভিড ১৯’ অতিমারীর সম্ভাব্য উৎস ও কারণ এবং সংক্রমণের গতি প্রকৃতির সন্ধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে বাদুড়ের নাম৷ আপাত নিরীহ উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী এই বাদুড়ের দেহে নানারকম সংক্রামক ভাইরাস বাস করে আসছে বহু যুগ থেকে—বাদুড় এই সমস্ত ভাইরাসের প্রাকৃতিক আধার বা আঁতুরঘর৷ যখন একদল সংক্রামক ভাইরাস বাদুড়কে প্রাকৃতিক আধার হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তাকে আমরা ‘Bat Virome’ বলি৷ এই Bat Virome’এর প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই ‘করোনাভিরিডি’ (Coronaviridae) পরিবারভুক্ত করোনা ভাইরাস (প্রায় ৩৫%) ৷ Bat Virome’এ উপস্থিত এই ভাইরাসগুলোর জেনেটিক বস্তু বা জিনোম, একটি বা দুটি সূত্র (Strand) সম্বলিত DNA (Deoxyribonucleic Acid) অথবা RNA (Ribonucleic Acid) দিয়ে তৈরী৷ জেনেটিক বস্তুর প্রকৃতি অনুযায়ী, ভাইরাসগুলোকে DNA ভাইরাস বা RNA ভাইরাস বলা হয় ৷ RNA ভাইরাসের ক্ষেত্রে জেনেটিক বস্তু হিসেবে যখন একটি মাত্র RNA সূত্র থাকে, তখন সেই RNA সূত্র (Strand)’টি ধনাত্মক (Positive) প্রকৃতির বা ঋণাত্মক (Negative) প্রকৃতির হতে পারে৷ Bat Virome-এ এই সব ধরনের জেনেটিক বস্তু সম্বলিত ভাইরাসগুলো অবস্থান করে৷ মোট স্তন্যপায়ীদের মধ্যে প্রায় ২৫% হলো বাদুড় প্রজাতি—ফলে নানা ধরনের এই বাদুড় বৈচিত্র্যকে বিভিন্ন সংক্রামক ভাইরাস বেছে নিয়েছে তাদের জনন ও বংশবিস্তারের অনুকূল প্রাকৃতিক আধার বা আঁতুরঘর হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে ৷ লক্ষ্যনীয় ভাবে ওড়বার ক্ষমতা থাকায়, ওড়বার জন্য বাদুড়ের হাড়ও কিছুটা ফাঁপা হয় যাতে বাদুড়ের শরীর হাল্কা থাকে৷ অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যা অনুপস্থিত, বাদুড়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সেই বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্যের জন্য, কোনোরকম রোগলক্ষণ ছাড়াই বাদুড় আশ্রয়দাতা হিসেবে সংক্রামক ভাইরাসদের নিয়ে সহাবস্থান করে বহু সময়কাল ধরেই৷ বিশেষত শীতের সময় কিছু বাদুড় শীতঘুম বা হাইবারনেশন’এ থাকে—ফলে শরীরের উত্তাপ ও বিপাকীয় প্রক্রিয়ার হার কম থাকায় হয়ত বাদুড়ের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিস্তেজ থাকে, ফলে ভাইরাসরা কোনোরকম প্রতিরোধের সন্মুখীন হয় না৷ বাদুড় উড়ে গিয়ে অনেক দুরত্ব অতিক্রম করতে পারে, ফলে বিভিন্ন প্রজাতির বাদুড় একে অপরের কাছাকাছি আসবার সুযোগ পায় এবং দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করবার স্বভাবজনিত কারণে বিভিন্ন প্রজাতির বাদুড়দের মধ্যে নানারকম সংক্রামক ভাইরাসের আদান প্রদান ঘটে৷ একমাত্র আন্টার্কটিকা বাদে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত বাস্তুতন্ত্রে যেমন গাছ, পাহাড়ের গুহা, সুড়ঙ্গ, পরিত্যক্ত জায়গায় বাদুড়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ বাদুড় সাধারণত দীর্ঘায়ু হয়—মোটামুটি এদের গড় আয়ু ৩০ বছরের বেশি৷ বাদুড় দীর্ঘদিন বাঁচে বলে ভাইরাসও দীর্ঘ সময় ধরে বাদুড়কে প্রাকৃতিক আধার হিসেবে ব্যবহার করে ৷ সঠিক কি পদ্ধতিতে বাদুড়ের দেহ থেকে অন্য প্রাণীর দেহে জুনোটিক বা আন্তঃ প্রজাতি সংক্রমণ ঘটে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে জানা যায়নি৷ বাদুড়ের দেহের বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে, অন্তবর্তী পোষককে (Intermediate host) সংক্রমণের মাধ্যমে বাদুড় থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে ৷
বিশ্বায়ন, মানবসভ্যতার অগ্রগতি এবং উন্নয়নের সাঁড়াশী চাপে পৃথিবীতে নানারকম স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র এখন চ্যালেঞ্জের মুখে৷ নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস চলছে, দাবানলে পুড়ছে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত গহন অরণ্যভূমি৷ পরিবেশে নানা প্রাণীর প্রাকৃতিক বাসভূমি বা আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে৷ সেখান থেকে উৎখাত হওয়া নানা ধরনের প্রাণীরা সরাসরি উন্মুক্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশে৷ বিভিন্ন অন্তবর্তী পোষকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাণীদের দেহে বহুদিন ধরে বসবাস করে থাকা বহু সংক্রামক ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাচ্ছে মানুষের শরীরে৷ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন অদূর ভবিষ্যতে আরো আরো মারণ রোগ বাসা বাঁধতে পারে মানুষের শরীরে, যার ফলে ঘটতে পারে আরো নতুন ধরনের মহামারী বা অতিমারী৷ পৃথিবী কি তবে আরো বিপর্যয়ের অপেক্ষায়?
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।
সুন্দর উপস্থাপনা। খুব ভালো লাগল।
আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
তথ্যসমৃদ্ধ সাবলীল লেখা…খুব ভালো লাগলো আর্য্যদা
Manashi Ghosh:
Lekhati pore badur bisoye anek tothyo jante parlam.
Aro janar agroho thaklo.
Dhonyobad lekhok, ar dhonyobad elebele k lekhati prokhash korar jonyo.