কি ভাবে কাজ করবে ফাইজার-বায়োনটেক এর করোনা ভ্যাকসিন?
কি ভাবে কাজ করবে ফাইজার-বায়োনটেক এর করোনা ভ্যাকসিন? চলুন দেখে নেওয়া যাক!
জার্মান কোম্পানি বায়োনটেক ফাইজার এর সাথে গাঁটছড়া বেঁধে এই ভ্যাকসিন তৈরি করে যার নাম (কোড নাম) BNT162b2 (কমার্শিয়াল নাম tozinameran)। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর মাধ্যমে এও প্রমান করে যে এটা ৯৫% কার্যকরী। কি ভাবে কাজ করবে ফাইজার-বায়োনটেক এর করোনা ভ্যাকসিন? চলুন দেখে নেওয়া যাক!
1️⃣ এই ভ্যাকসিন, কোরোনার বাইরে যে কাঁটা এর মতো প্রোটিন গুলো আছে যার মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরে ঢুকে এত মাতামাতি করে, (এতদিনে আমরা সবাই চিনে গেছি করোনাকে কেমন দেখতে নিশ্চই ) সেই এন্টিজেনকে টার্গেট করেই বানানো ।
2️⃣ mRNA হলো আমাদের শরীরে প্রোটিন তৈরীর কারিগর। এই ভ্যাকসিনটা সিনথেটিক mRNA দিয়ে তৈরী, যা আমাদের কোষের মধ্যে ঢুকে কাঁটা-প্রোটিন এর অনুরূপ প্রোটিন তৈরী করে এবং ফলস্বরূপ শরীরে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়। এর ফলে ভবিষ্যতে ভাইরাস আক্রমণ করলে শরীর তা আগে থেকে চিনে ফেলতে পারে।
3️⃣ কিন্তু শুধু mRNA কে বাইরে থেকে ইনজেক্ট করলে আমাদের দেহের ভিতরের বিভিন্ন উৎসেচক ওটাকে ভেঙ্গে ফেলবে, তাই mRNA কে একটা লিপিড ন্যানোপার্টিকেল এর স্তরের মধ্যে ভরে নিয়ে ইনজেক্ট করা হচ্ছে, আর এর ফলে কোষ আবরণ ভেদ করতেও সুবিধা হবে
4️⃣ কোষ এর মধ্যে ঢোকার পর mRNA টা বেরিয়ে আসছে। আর আমাদের কোষ এর রাইবোসোম গুলো mRNA এর কোড কে ডিকোড করে তৈরী করে ফেলছে করোনা ভাইরাসের সেই কাঁটার মতো প্রোটিন গুলো। কোষের ভিতরেও mRNA এর স্থায়িত্ব খুব বেশিদিন নয়, তাই এগুলো কোনোরকম দীর্ঘকালীন চিহ্ন রেখে যায় না।
5️⃣ এই প্রোটিন গুলোকে কোষ তার উপরিভাগে প্রদর্শন করে, যাতে আমাদের শরীরের অনাক্রম্যতা প্রদানকারী কোষ গুলো ওদের চিনতে পারে আর নষ্ট করে দেয়। এইরকম ভ্যাকসিনেটেড কোষ গুলো যখন মারা যায়, তখন ওই কাঁটা প্রোটিন বা তার খন্ডাংশ কে APC (antigen-presenting cell) নামক কোষ নিজের মধ্যে শোষণ করে কোষের উপরিভাগে প্রদর্শন করে। তখন অন্য আরেক ইমিউন কোষ Th বা T হেল্পার কোষ এই কাঁটা-প্রোটিনকে শনাক্ত করে উত্তেজিত হয়।
6️⃣ T হেল্পার কোষ যখনি ওই কাঁটা গুলোর সংস্পর্শে আসছে সে আবার B কোষকে সক্রিয় করে দিচ্ছে। B কোষের কাজ হলো এন্টিবডি তৈরী করা। B কোষ এমন এন্টিবাডি তৈরী করতে থাকছে যেগুলো ওই কাঁটা প্রোটিন দেখলেই তাঁদের ধ্বংস করে ফেলছে। আর কাঁটাটা না থাকলে করোনা কোনো ভাবেই আমাদের দেহে প্রবেশ করতে পারবেনা।
অনেক সময় আবার প্রতিরোধ গুণ সম্পন্ন কোষ গুলো কে APC অন্য একধরণের T কোষ এর কাছে নিয়ে যাচ্ছে যার নাম হলো কিলার T কোষ। এরা আবার এন্টিবাডি তৈরীর ধার ধারেনা। সোজাসুজি মেরে ফেলে কাঁটা প্রোটিনওয়ালা কোষ গুলোকে কিছু কেমিক্যাল রিলিজ করে।
এতো গেল ভ্যাকসিনটা কাজ কিভাবে করবে। এবার আসি কিভাবে আর কতবার নিতে হতে পারে ভ্যাকসিনটা।
আপাততো ফাইযার এর দুটো ডোজ নির্ধারণ করেছে 21 দিনের ব্যবধানে। কারণ প্রথম বার ভ্যাকসিন দেওয়ার পর যে এন্টিবডি গুলো তৈরী হবে কিছু সপ্তাহ পর তাঁদের সংখ্যা অনেকটা কমে যাবে যেটা ভাইরাসকে প্রতিহত করতে যথেষ্ট নয়। তবে হ্যাঁ আমাদের অনাক্রম্যতা বাবস্থা কিন্তু চিনে যাবে এবং মেমরি কোষ তৈরী করে রাখবে যাতে ভবিষ্যতে ভাইরাস আক্রমণ হলে আর চিনতে সময় না লাগে, সাথে সাথে কাজ শুরু করে দিতে পারে। ২১ দিন পর দেওয়া হবে বুস্টার ডোজ যাতে এন্টিবডি এর সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরী হয়ে যায়।
আপাততো ফাইযার এর দুটো ডোজ নির্ধারণ করেছে 21 দিনের ব্যবধানে।
২০২০ এর জানুয়ারী থেকে 3টে পর্যায়ে ট্রায়াল করা হয়েছে প্রায় ৪৪০০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপর। কোনো মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (grade 4/ life-threatening) কারোর মধ্যেই দেখা যায়নি। অবশেষে UK এবং কানাডা তে এই ভ্যাকসিন অনুমোদিত হওয়ার পর, USA FDA অনুমোদনের দোরগোড়ায় এই ভ্যাকসিনটি।
ফাইযার-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ এই করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপক বন্টনের পরিকল্পনা আছে। ভারতে DCGI এর কাছে ফাইযার-এর তরফ থেকে জরুরী অনুমোদনের আবেদন জানানো হয়েছে। আমাদের চোখ থাকবে DCGI-এর সিদ্ধান্তের ওপর।
ফাইযার-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ এই করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপক বন্টনের পরিকল্পনা আছে। ভারতে DCGI এর কাছে ফাইযার-এর তরফ থেকে জরুরী অনুমোদনের আবেদন জানানো হয়েছে।
~~~~~~~
কলমে এলেবেলে শ্রীপর্ণা
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।