বিজ্ঞানের খবর: পাওয়া গেলো, ডাইনোসরের আমলের দাঁতওয়ালা ‘টুকান’ এর জীবাশ্ম
810 বার লেখাটি পঠিত হয়েছে ~~~
৬৮ লক্ষ বছর আগের, ডাইনোসরের আমলের ‘টুকান’ নামের এক পাখির জীবাশ্ম পাওয়া গেলো। এমনিতে জৈবিক বিবর্তন বুঝতে পাখিদের অবদান অবস্মরণীয়। কাকের মত আকার ও ধারালো কাস্তের মত ঠোঁট, পাখিটার খুলির সাইজ ৯ সেন্টিমিটারেরও কম, পক্ষি বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন Falcatakely forsterae ( ল্যাটিন ও মালাগাসি শব্দের সংমিশ্রণ), তবে এই প্রজাতি নিয়ে গবেষণা বেশিদূর এগোয়নি। সত্যি কথা বলতে, এই প্রজাতির একটি জীবাশ্ম আগেও পাওয়া গেছে, তারপর সিটি স্ক্যান করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি ওই পাখিটির প্রজাতির জীবাশ্ম। Falcatakely হলো ক্রেটেসওশ যুগের আবিষ্কৃত পাখিদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রজাতি যা নেশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন অর্থায়িত একটি টিম মাদাগাস্কারে আবিষ্কার করে। প্রথম আবিষ্কৃত পাখি আর্কিওপটেরিকস, যার লম্বা লেজ ও কিছু আদিম বৈশিষ্ট্য ছিল, সেই তুলনায় Falcatakely অনেকটাই আধুনিক পাখির মত দেখতে।
বর্তমানে পৃথিবীতে যত পাখি আছে তাদের সবার ঠোঁট পর্মক্সিলা নামে একটি হাড় থেকে তৈরি। পরীক্ষা করে দেখা যায়, নতুন পাখিটির সূচালো ঠোঁটও একই হাড় থেকে তৈরি এবং ‘টুকান’-এর সাথে এর চেহারার যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে, এর জীবাশ্ম আগে কখনো পাওয়া যায়নি। ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি এবং নিউরোসাইন্সের অধ্যাপক এবং এই নতুন আবিষ্কারের সাথে যুক্ত প্রধান গবেষক, প্যাট্রিক ও কানোরের মতে, “৬৫ লক্ষ থেকে ২ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে মেসোজিক যুগে বসবাসকারী একটিমাত্র বিশেষ প্রজাতির পাখির এরম লম্বা ও মজবুত ঠোঁট ছিল।” বিখ্যাত নেচার পত্রিকাতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে আরো অন্যান্য চমকও ছিল। বলা হয় যে Falcatakely এর সাথে আজকালকার ‘টুকান’ বা হর্নবিল পাখির শুধু ঠোঁটের মিল নয়, যে হাড় দিয়ে মুখ তৈরি তারও সাদৃশ্য আছে। যদিও এইসব তথ্যপ্রমাণ ও বৈশিষ্ট্য খুঁজে বার করা খুব একটা সহজ কাজ ছিলনা।
সমস্যার সূত্রপাতের ৭ বছর পর, যখন বিজ্ঞানীরা এই জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করতে যান তখন দেখেন যে দীর্ঘ অবহেলা ও অযত্নের ফলে এর ঠোঁট ও খুলি এতটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে যে সেগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তারপর তাঁরা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের সাহায্যে এর খুলি পুনর্গঠন করেন এবং অন্যান্য প্রজাতির সাথে তুলনা করে দেখেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সাইন্সের অধ্যাপক দানিয়েল ফিল্ড, যিনি গবেষণাপত্রটির পর্যালোচনা করেছেন, তাঁর মতে গবেষণা থেকে অসাধারণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেইসব তথ্যের মধ্যে অন্যতম হলো যে জীবাশ্মের ঠোঁট একটা সংরক্ষিত দাঁতের সাথে সংযুক্ত ছিল। এইসব বৈশিষ্ট্য থেকে সহজেই অনুমেয় Falcatakely -এর শারীরিক বৈশিষ্ট্য, তাদের সাথে ‘টুকান’এর সাদৃশ্য। সমসাময়িক আরো প্রায় ২০০ টি প্রজাতির পাখি নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে যে, Falcatakelyএর খুলির মত বৈশিষ্ট্য তাদের কারুর ছিলোনা। ও কনোরের মতে, এই আবিষ্কার হলো ডাইনোসরদের যুগে তাদের সাথে বসবাসকারী কিছু পাখির অস্তিত্বের প্রমাণ।
পাখিদের জীবাশ্ম অক্ষত অবস্থাতে খুঁজে পাওয়া খুবই বিরল কারণ তাদের মাথার কঙ্কাল খুব হালকা হবার ফলে সেগুলোকে যথাযথ সংরক্ষণ করা খুব কঠিন। গবেষকদল, যারা মাদাগাস্কার অঞ্চলে কাজ করছেন, ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি যেখানে Falcatakely পাওয়া গেছিলো, সেখানে এখনও খননকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ও কনোর, এরম আরো জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি আশা রাখেন Falcatakely এর এরম ঠোঁট হবার কারণও খুঁজে পাওয়া যাবে। তাঁর মতে এরম ঠোঁট শুধু কি খাবার খাওয়ার জন্য নাকি অন্য প্রজাতির পাখির সাথে সংকেত বিনিময়ের জন্য ব্যবহার হতো, এরম অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি আছে।
চিত্রসুত্রঃ ও’কনোর, Nature, ২০২০
————————–
~ কলমে এলেবেলে দেবারুন ~
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।
খুব তথ্যভিত্তিক লেখাটি। উপযোগী চিত্রায়ণ লেখাটিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। লেখককে অনেক সাধুবাদ জানালাম।
😊🙏😊