পাহাড়ে উপল— যাত্রা শুরু
প্লেট টেকটোনিক প্রথম পর্ব
উপলের সবে সবে উচ্চ–মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে, আর পাঁচটা ছেলের মতো ঘরকুনো ছিল না সে কোনোদিনও। ঘরে বসে ভিডিও গেম খেলা বা পাড়ার মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল খেলা কোনোটাতেই আগ্রহ ছিল না তার। উপলের একটাই নেশা ছিল অ্যাডভেঞ্চার আর ছবি তোলা। প্রকৃতির যেকোনো সৃষ্টি তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতো, সে পাহাড়, পর্বত, ঝর্ণা হোক বা সমুদ্রই হোক। সব কিছু খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতো সে, আর নানান প্রশ্ন জাগতো তার মনে। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য সে একজনেরই স্মরণাপন্ন হতো, তিনি নির্ঝর রায়, বর্তমানে পেডং–এর একটি ছোট্ট মহাবিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ববিদ্যা পড়ান। উপলের সম্পর্কে তিনি তার মামা হন। বয়সের পার্থক্য থাকলেও তারা একে ওপরের খুব ভালো বন্ধু। উপল ছোট থাকতেই তার মামার সাথে মাঝে মাঝে নানান অ্যাডভেঞ্চারে বেড়িয়ে পড়তো। উপলের বাবা–মাও নির্ঝরের প্রতি অগাধ ভরসায় ছেলেকে যেতে দিতেন। এই ভাবেই প্রতি পরীক্ষার পর নির্দিষ্ট রুটিন হয়ে গেছে উপলের মামার সঙ্গে বেড়িয়ে পড়া। এবারের পরিকল্পনা হল উপল পেডং–এ চলে আসবে মামার কাছে, তারপর দার্জিলিং, ঘুম ও আশেপাশের চত্বর চষে ফেলবে দুজনে মিলে। সেই পরিকল্পনা মতোই পরীক্ষা দিয়ে রাতের দশটা–পাঁচের দার্জিলিং মেল–এ চেপে বসলো শিয়ালদহ স্টেশন থেকে। এই প্রথম সে একা একা ট্রেনে চেপে যাচ্ছে দূরে কোথাও। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর দরজায় দাঁড়িয়ে বাবা–মাকে হাত দেখিয়ে চলে এলো নিজের সিটে। এসি কামরায় যাতায়াত করা তার বরাবরের অপছন্দের। তার মতে ট্রেনে যাওয়ার সময় প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ থাকে না এসি কামরায়, কেমন যেন বিচ্ছিন্ন মনে হয় নিজেকে। তাই স্লিপার কামরার লোয়ার বার্থে জানালার দিকে মাথা করে শুয়ে পড়লো সে। জানালা দিয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে ট্রেনের দুলুনিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেও জানে না। সকালে ঘুম ভাঙলো চা কফির ডাকে। তাড়াতাড়ি উঠে মুখ ধুয়ে এক কাপ চা–এ চুমুক দিতে দিতেই কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। কথা মতোই কামরা থেকে নেমেই দেখতে পেলো মোটা ফুলফ্রেম চশমা, কার্গো প্যান্ট, ফিল্ড–সু আর কালো টি–শার্ট পড়া নির্ঝর মামা দাঁড়িয়ে আছে। টি–শার্টের ওপর লেখা “The whole world is our laboratory”, যার অর্থ এই গোটা পৃথিবীই আমাদের গবেষণাগার। মামাকে দেখে বরাবরের মতোই উপলের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো আশু অ্যাডভেঞ্চারের কথা ভেবে।
কলকাতা থেকে ঢালের বিপরীতে পাথর তাহলে শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছালো জলপাইগুড়িতে, চল তাহলে আরও খানিকটা ওপরে যাওয়া যাক— বললেন নির্ঝর মামা।
টি–শার্টের ওপর লেখা “The whole world is our laboratory”, যার অর্থ এই “গোটা পৃথিবীই আমাদের গবেষণাগার”।
প্রথমটাই বুঝতে পারেনি উপল, পরমুহূর্তে মনে পড়ে গেলো তার নামের অর্থ তো ‘পাথর’।
তখন একটু বুদ্ধিদীপ্ত কণ্ঠে সে বললো— ঝর্ণার জল যদি অভিকর্ষের বিপরীতে বইতে পারে তাহলে পাথর কেন নয়?
‘নির্ঝর’ মানে ‘ঝর্ণা’ সেটা উপল জানে দেখে নির্ঝর মামা বেশ খুশি হয়ে উপলের পিঠ চাপড়ে বললেন— বাঃ ভালো কথা শিখেছিস দেখছি, আচ্ছা বল দেখি কোথায় এমন ঝর্ণা আছে? আর এমনটা হয়ই বা কেন?
পৃথিবীতে এমন কিছু জলপ্রপাত আছে, যার জলের প্রবাহ অভিকর্ষ বলের বিপরীত দিকে হয়
উপলের মনে পড়ে গেল এলেবেলের ‘তাইনাকি!’-এর কথা। ওখানে দেখেছিলো “পৃথিবীতে এমন কিছু জলপ্রপাত আছে, যার জলের প্রবাহ অভিকর্ষ বলের বিপরীত দিকে হয়”। পরবর্তীতে ‘তাই নাকি‘-এর নিচের আলোচনা থেকে সে জেনে নিয়েছিলো নদী বা অন্য জলধারার পথে হঠাৎ করে যখন তীক্ষ্ন উচ্চতার পরিবর্তন হয় তখনই ঝর্ণার সৃষ্টি হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জলপ্রবাহের বিপরীতে বাতাসের গতিবেগ এতোটা বেশি হয় যে সেই জলধারাকে সাময়িক আংশিকভাবে অভিকর্ষের বিপরীতে বইতে বাধ্য করে। এরকম ঝর্ণা ভারতবর্ষেও আছে মহারাষ্ট্র–এর পুনেতে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, চিলি, জাপান, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশেও এমন “উল্টো জলপ্রপাত” বা “Upside-down or Inverted waterfall” দেখতে পাওয়া যায়— গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো উপল।
নির্ঝর মামা উপলের কথা শুনে বেশ খুশি হলেন, সঙ্গে এলেবেলের প্রচেষ্টাকেও সাধুবাদ জানালেন। এর আগে উপল পাহাড়ে আসেনি, মামার সাথে যা ঘুরেছে সবই সমতলে। পাহাড় শুধু মোবাইল আর ল্যাপটপের পর্দায় দেখেছে সে। গাড়ির জানালার বাইরে তাকিয়ে সমস্ত দৃশ্য যেন গিলে খেতে লাগলো উপল। পাহাড়ি এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ হয়েছে সে, যে খাবার কথা প্রায় ভুলেই গেছে।
মামা পকেট থেকে মোটা লাল সুতোয় বাঁধা তিনটে জিনিস বের করলেন। একটা ‘ইউ’ আকৃতি চুম্বক, একটা ছোট লেন্স ও একটা ছোট ছুরি।
কি রে! ট্রেনে কিছু খেয়েছিস? এই নে ধর— এই বলে নির্ঝর মামা স্যান্ডউইচ ভর্তি একটি টিফিন কৌটো এগিয়ে দিলেন।
এতক্ষণে উপল একটু হুঁশ ফিরে পেয়ে পেটের ভেতরের খিদেটা টের পেলো। দুই হাতে দুটো স্যান্ডউইচ তুলে নিয়ে খেতে খেতে বললো— আচ্ছা মামা তুমি যে বলেছিলে এবার পরীক্ষার পর এলে আমাকে কিছু উপহার দেবে।
ও তুই সেটা মনে রেখেছিস দেখছি!— এই বলে মামা পকেট থেকে মোটা লাল সুতোয় বাঁধা তিনটে জিনিস বের করলেন। একটা ‘ইউ’ আকৃতি চুম্বক, একটা ছোট লেন্স ও একটা ছোট ছুরি।
উপল বেশ উৎসাহিত হয়ে এক হাত ফাঁকা করবার জন্য গোটা স্যান্ডউইচটা মুখে পুরে দিয়ে মামার হাত থেকে জিনিসগুলো প্রায় ছিনিয়ে নিলো। তারপর সবকটা জিনিস নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বললো— আচ্ছা এগুলোর আলাদা আলাদা ভাবে কাজ তো আমি জানি। একটি উত্তল লেন্স যা দিয়ে ছোট জিনিস বড় করে দেখা যায়, আর চুম্বক যা অয়শ্চুম্বকীয় ধাতু বা অন্য কোনো চুম্বকের বিপরীত মেরুকে আকর্ষণ করে। আর এই ছুরি ব্যবহার হয় কোনো কিছু কাটার জন্য। কিন্তু এদের সুতো দিয়ে বাধা কেন?
নির্ঝর মামার ছোট থেকেই এই জন্যই উপলকে এতো পছন্দ, ওর যেকোনো জিনিসের সম্পর্কে জানার এই আগ্রহটাই ওকে মামার কাছে এতো আকর্ষণীয় করে তোলে।
মামা নিজেও একটা স্যান্ডউইচে কামড় বসিয়ে বললেন— এটা হলো ভূতত্ত্ববিদদের একদম প্রাথমিক অস্ত্র। ডাক্তারবাবুরা যেমন গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে বেড়ান তেমনই এই সুতো দিয়ে তিনটি জিনিস বেঁধে ফিল্ডে অনেক ভূতত্ত্ববিদ এগুলি গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ান। লেন্স দিয়ে খনিজ বা পাথরের ছোট দানা শনাক্তকরণের চেষ্টা করা হয়। আর তুই একদম ঠিক বলেছিস, চুম্বক অন্য চৌম্বক ধর্ম আছে এমন খনিজকে আকর্ষণ করে, তাই এটি অন্য কোনো খনিজের চৌম্বক ধর্ম আছে কিনা তা জানতে ব্যবহার করা হয়। আর ছুরিটি লোহা দিয়ে তৈরি, যার কাঠিন্য ‘মহস্’ মাত্রায় ৪.৫, সেজন্য কোনো খনিজে যদি ছুরি দিয়ে দাগ কাটা যায় তাহলে সেটির কাঠিন্য ৪.৫–এর কম আর যদি না যায় তাহলে কাঠিন্য বেশি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। এই ভাবে এই তিনটি জিনিস একত্রে ফিল্ডে খনিজ ও পাথর শনাক্তকরণের প্রাথমিক পর্যায়ের সরঞ্জাম হিসেবে কাজ করে। আর যদি ফিল্ডে ঘোরাঘুরি করতে করতে খিদে পেয়ে যায় তাহলে শসা, আপেল, পেয়ারা কেটে খেতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। হা! হা! হা! তোকে দিলাম কারণ এবার পাহাড়ে ঘুরতে ঘুরতে তোকে হাতে নাতে এর ব্যবহার শিখিয়ে দেব বুঝলি!
এতক্ষণে উপল দুটো স্যান্ডউইচ খেয়ে দুই হাত ফাঁকা করে এক হাতে লেন্স ধরে অন্য হাতের রেখাগুলো দেখতে শুরু করেছে। এবারে আস্তে আস্তে গাড়ি সমতল ছেড়ে উঠতে শুরু করলো আনত তলে। উপল জিনিসগুলো যত্ন করে ব্যাগে ভরে রেখে হাতে ক্যামেরা নিয়ে নিয়েছে। আবার জানালার বাইরের দৃশ্যে হারিয়ে গেল তার মন। পর পর ছবি তুলে যাচ্ছে সে, যেন সব দৃশ্য ধরে নিয়ে যাবে নিজের সাথে। হঠাৎ করে উপল খেয়াল করলো তার কানের ভেতর কি যেন হচ্ছে। একটু চাপ অনুভব করছে, তারপর শব্দগুলো যেন কিছুটা ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এরকম অনুভুতি তার আগে হয়েছে বলে মনে পরে না। তাই সে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই ব্যাপারটা মামাকে জিজ্ঞেস করলো— আচ্ছা মামা কানের ভেতর….
আর বলতে হলো না উপলকে, মামা যেন প্রস্তুতই ছিলেন প্রশ্নটার জন্য।
হ্যাঁ এরকম হয় কারণ তুই ওপরের দিকে উঠছিস আর ওপরে বাতাসের চাপ কম। কানের কর্ণপটহ (Eardrum)-এর ভেতর বায়ুচাপ ও বাইরের বায়ুচাপের তারতম্য হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। আমাদের কানের ভেতর ইউস্টেশিয়ান নালী বলে একটি অংশ রয়েছে যা আমাদের কানের মধ্যভাগের সাথে নাকের পেছন দিকের যোগাযোগ স্থাপন করে, এই নালীটি বায়ুচাপের তারতম্যের দরুন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমনটা হয়। একে “Ear barotrauma” বা “কানের বায়ুচাপ জনিত ব্যাধি” বলা হয়। কিন্তু এতে খুব একটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নতুন পরিবেশে একবার মানিয়ে নিলে আর তেমন সমস্যা হবে না। উচ্চতার পরিবর্তন বন্ধ হলে বায়ুচাপের তারতম্য ও আর হবে না, তাই সমস্যাও উধাও হয়ে যাবে।
এতো উঁচু পর্বতমালা এটা কিভাবে তৈরী হল? এগুলো কি পৃথিবীর সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই তৈরী হয়েছে? অথবা এগুলো কি এমনি থাকবে সবসময়?
মামার কথা শুনে উপল কিছুটা স্বস্তি পেলো। এবারে সে আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলো, মে মাস হওয়া সত্ত্বেও যত ওপরে যাচ্ছে ততো বেশি করে তার ঠান্ডা লাগছে। এর কারণটা সে নিজেই জানে, উচ্চতার সাথে পারিপার্শ্বিক বায়ুর উষ্ণতাও হ্রাস পায়। আর তা বায়ুচাপ পরিবর্তনের সাথেই সম্পর্কযুক্ত। ওপরে উঠলে বায়ুচাপ হ্রাসের ফলে বায়ু প্রসারিত হওয়ার দরুন তার উষ্ণতা কমে যায়। আজ সেটা নিজে অনুভব করলো সে, এই কথা ভেবে সে নিজে মনে মনেই খানিক উল্লসিত হল। সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে ব্যাগ থেকে একটা সোয়েটার ও টুপি বের করে পরে নিল। তারপর বাইরের দিকে তাকিয়ে আকাশ–পাতাল ভাবতে শুরু করলো। অনেক ভেবে তার মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হল— আচ্ছা! এতো উঁচু পর্বতমালা কিভাবে তৈরি হল? এগুলো কি পৃথিবীর সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হয়েছে? অথবা এগুলো কি এমনি থাকবে সবসময়?
উপলকে অনেকক্ষণ চুপ থাকতে দেখে মামা জিজ্ঞেস করলেন— কিরে কি এতো ভাবছিস বলতো?
উপল মামার দিকে না তাকিয়েই আপনমনে এক এক করে মনের প্রশ্নগুলো বলে গেল।
সব শুনে নির্ঝর মামা বললেন— আচ্ছা বুঝলাম, এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে একদম গোড়ার থেকে শুরু করতে হবে।
আমাদের পৃথিবীর অভ্যন্তর মূলত ভূত্বক (Crust), ম্যান্টেল (Mantle) ও কেন্দ্রমন্ডল (Core) এই তিনভাগে ভাগ করা যায়।
উপল এবারে মামার দিকে ফিরে তাকিয়ে উৎসাহের সঙ্গে বললো, এখনও তো কয়েক ঘন্টার পথ বাকি, নাকি? তো কিছুটা শোনায় যায়, এখন শুরু করো, বাকিটা না হয় আবার পরে শুনবো।
আচ্ছা শোন্ তবে, এই বলে শুরু করলেন নির্ঝর মামা—
আমাদের পৃথিবীর অভ্যন্তরকে মূলত ভূত্বক (Crust), ম্যান্টেল (Mantle) ও কেন্দ্রমন্ডল (Core) এই তিনভাগে ভাগ করা যায়। একদম ওপরের ভাগ হল ভূত্বক, যা খানিকটা ডিমের খোলার মতো পৃথিবীর বাইরের অংশ, শক্ত কিন্তু পাতলা। সমুদ্রের তলদেশে থাকা ভূত্বককে সামুদ্রিক ভূত্বক (Oceanic Crust) বলে ও স্থলভাগের ভূত্বকের অংশকে মহাদেশীয় ভূত্বক (Continental Crust) বলে। সামুদ্রিক ভূত্বকের গভীরতা খুব কম, ৩–১০ কিমি, অন্যদিকে মহাদেশীয় ভূত্বকের গভীরতা অনেক বেশি। গড়ে প্রায় ৩৫ কিমি, যা পর্বতমালার কাছে প্রায় ৭০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে। ডিমের খোলাটা যদি ভূত্বক হয়, তাহলে ডিমের সাদা অংশটা হল ম্যান্টেল এবং কুসুমটা হল কেন্দ্রমন্ডল। পৃথিবীর অভন্তরীন এই গঠন সম্পর্কে অন্য একদিন তোকে বিস্তারিত বলব। আজকে তোর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যতটুকু প্রাথমিক জ্ঞান দরকার ততটুকুই বলছি। ভূত্বক এবং ম্যান্টেলের একদম ওপরের কয়েক কিলোমিটার (মোট প্রায় ১১০ কিমি) নিয়ে তৈরি হয় অশ্মমণ্ডল (Lithosphere), এর ঠিক নিচের অংশকে বলে অশক্তমণ্ডল (Asthenospehere)।
উপল খুব মন দিয়ে শুনছে কিন্তু মামা লক্ষ্য করলেন তার চোখের চাহনিতে কেমন জানি একটা ফ্যাকাশে ভাব। নির্ঝর মামা তখন ব্যাগ থেকে একটা প্যাড বের করে পেন্সিল হাতে নিয়ে আঁকিবুকি শুরু করলেন। তারপর তাতে পরিকল্পিত ছবির (schematic drawing) মাধ্যমে উপলকে পৃথিবীর গঠন খানিকটা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। এবারে উপলের চোখগুলো আবার জ্বলজ্বল করে উঠলো অর্থাৎ ও বুঝেছে।
ছবি: নির্ঝর মামার প্যাড থেকে
নির্ঝর মামা তখন বললেন— একদম পরিষ্কার তো? তাহলে এগোনো যাক?
উপল জোর গলায় বললো— হ্যাঁ একদম!
মামা আবার শুরু করলেন— এই অশ্মমণ্ডল টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গোটা পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে। সমুদ্রের ওপরে ও স্থলভাগের ওপরের অশ্মমন্ডলকে যথাক্রমে ভূত্বকের ন্যায় সামুদ্রিক ও মহাদেশীয় অশ্মমণ্ডল বলে। এই বারে মোবাইলের পর্দায় একটি ছবি দেখালেন মামা, সেই ছবি দেখে উপলের ব্যাপারটা আরও খানিকটা পরিষ্কার হয়ে গেল। ইতিমধ্যে গাড়ি এসে পৌঁছেছে ঘুম স্টেশনে।
ছবি: নির্ঝর মামার মোবাইলের পর্দায়
নির্ঝর মামা বলা থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন— বলতো ঘুম কোনো বিখ্যাত?
উপল বলল— এটা ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ রেল স্টেশন, যার উচ্চতা প্রায় সাত হাজার ফুটের কাছাকাছি।
একদম ঠিক বলেছিস! পিঠ চাপড়ে বললেন নির্ঝর মামা।
এরপর ঘুম পেরিয়েই দেখতে পেলো দার্জিলিং শহর।
নির্ঝর মামা বললেন— এখন তবে এইটুকুই থাক, কারণ দার্জিলিং প্রায় এসেই পড়েছি। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে না হয় আবার কিছুটা বলব। শুরু করবো আসল গল্প প্লেট টেকটোনিকস্–এর।
উপলও সানন্দে সম্মতি জানালো মামার কথায়। জানালার খুব কাছেই মেঘেদের আনাগোনা শুরু হয়েছে, মনে হলো যেন কিছু কিছু মেঘ উপলের হাত ছুঁয়ে চলে গেল।
—————————–
~ কলমে ও আঁকিবুকি এলেবেলে উদ্দালক ~
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।
ভূতত্ত্বের গোড়ার কথা অত সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখছেন বলে আমার তরফ থেকে জানাই আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ ও অকুণ্ঠ অভিনন্দন। আপনার সাবলীল লেখা পাঠ করে ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিতভাবেই উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।😊🙏😊