বিজ্ঞানের খবর: সৌরজগৎ বহির্ভূত গ্রহে প্লেট টেকটোনিকের অস্তিত্ব?
প্লেট টেকটোনিক (Plate Tectonics) শব্দটি ইদানিংকালে খুব জনপ্রিয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি হয়তো হতোই না যদি না আমাদের পায়ের নিচের প্লেটগুলি চলাচল করতো। কোনো গ্রহে প্রাণের উৎপত্তির অন্যতম গ্রহ-বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্লেট টেকটোনিক উল্লেখযোগ্য।
আপনারা নিশ্চয় সৌরজগতের বাইরের গ্রহ (Exoplanet) এলএইচএস ৩৮৪৪বি (LHS3844b)-এর নাম শুনে থাকবেন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এই গ্রহে প্লেট টেকটোনিকের অস্তিত্ব থাকতে পারে।
গ্রহটির একটি গোলার্ধ সর্বদা তার ‘সূর্যের’ দিকে মুখ করে থাকে (সর্বদা দিন) এবং অন্য গোলার্ধ সর্বদা উল্টোদিকে (সর্বদা রাত্রি)
সেন্টার ফর স্পেস এন্ড হ্যাবিট্যাবিলিটি, বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের (Centre for Space and Habitability, University of Bern) বিজ্ঞানী টোবায়েস জি মেইয়ারের (Tobias G. Meier) নেতৃত্বে এক গবেষক দল, যাদের মধ্যে রয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (University of Oxford) ও ইটিএইচ জুরিখ (ETH Zurich)-এর গবেষকগণ, তাদের দ্যা অস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স (The Astrophysical Journal Letters)-এর প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন ৪৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত সুপার আর্থ এলএইচএস ৩৮৪৪বি-তে প্লেট টেকটোনিকের অস্তিত্বের সম্ভাবনার কথা। এলএইচএস ৩৮৪৪বি একটি বহিঃ সৌরজাগতিক গ্রহ, যা একটি লাল বামন নক্ষত্র (Red dwarf) এলএইচএস ৩৮৪৪-কে প্রদক্ষিণ করছে প্রতি ১১ ঘন্টায় একবার (১ বছরের দৈর্ঘ্য: আমাদের পৃথিবীর ১১ঘন্টা) ও যার ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় ১.৩২ গুণ। ‘সূর্যের’ খুব কাছে অবস্থান করার জন্য তীব্র মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে এই গ্রহটির একটি গোলার্ধ সর্বদা ‘সূর্যের’ দিকে মুখ করে থাকে (সর্বদা দিন) এবং অন্য গোলার্ধ সর্বদা উল্টোদিকে (সর্বদা রাত্রি)। আবার সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে এও জানা যাচ্ছে যে এই গ্রহের চারিপাশে কোনো আবহাওয়ার অস্তিত্ব নেই। তাই সর্বকালীন দিনের গোলার্ধের সাথে রাত্রিকালীন গোলার্ধের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকখানি। দিবাকালীন গ্রহের উষ্ণতা ১০৪০±৪০ কেলভিন, অন্যদিকে রাত্রিকালীন গ্রহের উষ্ণতা ০ কেলভিনের আশেপাশে। বিজ্ঞানী টোবায়েস বলেছেন— “আমরা ভেবেছিলাম উষ্ণতার এই মাত্রাধিক তারতম্যই গ্রহের অভ্যন্তরের উপাদান প্রবাহের জন্য দায়ী” (“We thought that severe temperature contrast might affect material flow in the planet interior”)।
চিত্র: এক গোলার্ধিয় টেকটনিক (Hemispheric Tectonics) প্রক্রিয়া মূল গবেষণাপত্র থেকে
এলএইচএস ৩৮৪৪বি গ্রহে এক গোলার্ধিয় টেকটনিক (Hemispheric Tectonics) প্রক্রিয়া থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
গবেষকদল বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পাথরের সাথে গ্রহের আভ্যন্তরীণ তাপপ্রবাহকে মাথায় রেখে এবং সর্বোপরি বাহ্যিক এই উষ্ণতার তারতম্যকে বিবেচনা করে গণকযন্ত্রে সংখ্যাগত অনুকরণ পদ্ধতির (Numerical simulation) মাধ্যমে দেখতে পান— গ্রহের এক গোলার্ধে কেবলই উর্ধমুখী বস্তুপ্রবাহ ও অন্য গোলার্ধে নিম্নমুখী বস্তুপ্রবাহের অস্তিত্ব রয়েছে। অর্থাৎ এক গোলার্ধে সর্বদা অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে ও তার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরণের গ্যাসও নির্গত হচ্ছে, অন্য গোলার্ধের গ্রহ-অভ্যন্তর তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকছে। তবে বিজ্ঞানী টোবায়েসের মতে তাদের সিমুলেশনগুলি সুস্পষ্টভাবে বস্তু প্রবাহের ধারণগুলি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হলেও তার সত্যতা যাচাই করার জন্য আরও ভালোভাবে গ্রহটির পর্যবেক্ষণ জরুরি। সবশেষে এটা বলাই শ্রেয় এলএইচএস ৩৮৪৪বি গ্রহে এক গোলার্ধিয় টেকটনিক (Hemispheric Tectonics) প্রক্রিয়া থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
মূল গবেষণাপত্রটি পড়তে হলে ক্লিক করুন: https://arxiv.org/pdf/2103.02374
—————————–
~ কলমে এলেবেলে উদ্দালক ~
► লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক করুন, কমেন্ট করুন, আর সকলের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
► এলেবেলেকে ফলো করুন।
নতুন তথ্য জানতে পেরে ভালো লাগলো। প্রাণের সন্ধান জারি থাকুক।