নোবেল পুরস্কার ২০২২ : রসায়ন

317 বার লেখাটি পঠিত হয়েছে ~~~

রসায়নবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন জটিল অনু গড়ে তোলার গবেষণায় নিয়োজিত এবং এই গবেষণা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঔষধি ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ঔষধাবলি গুণসম্পন্ন প্রাকৃতিক অনুকে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে এরকম গবেষণা যথেষ্ট সময় ও ব্যয়বহুল। রসায়নের নোবেল কমিটির চেয়ার যোহান অ্যাকভিস্টের মতে, এই বছরের রসায়নের নোবেল পুরস্কার অন্যান্য বছরের মতো জটিল বিষয় নিয়ে নয় বরং তুলনামূকভাবে অনেকটা সহজ সরল বিষয় এর উপর। বিভিন্ন কার্যকরী অণুগুলো (functional molecules) সহজ পথেও তৈরি করা যেতে পারে।

ব্যারি শার্পলেস- যিনি রসায়নে এই নিয়ে দুবার নোবেল পুরস্কার পেলেন, তাঁর হাত ধরেই সর্বপ্রথম এই বিষয়ে গবেষণার শুরু হয়। তিনি  ২০০০ সাল নাগাদ click chemistry এর ধারণার প্রবর্তন করেন – যা সহজ এবং পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য, এখানে যাবতীয় বিক্রিয়া দ্রুতগতিতে হয় এবং অযাচিত উপজাত দ্রব্যের (unwanted by-products) উদ্ভব এড়ানো সম্ভব হয়।

বিজ্ঞানী কে. ব্যারি শার্পলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এর  স্ক্রিপস (Scripps Research) রিসার্চে কর্মরত।© Nobel Prize Outreach

কিছুকাল পরে মর্টেন মেলদাল এবং ব্যারি শার্পলেস স্বাধীনভাবে,  the copper catalysed azide-alkyne cycloaddition এর উপস্থাপনা করলেন, যা বর্তমানে click chemistry শাখার খুবই গুরুত্বপূর্ন অংশ। এটা খুবই সুন্দর এবং দক্ষ রাসায়নিক বিক্রিয়া যার ব্যবহার বর্তমানে বহুল। বিভিন্ন রকম ব্যবহারের মধ্যে ঔষধি ক্ষেত্র উন্নয়নে, DNA mapping এ প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।

বিজ্ঞানী মর্টেন মেলদাল, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত © Nobel Prize Outreach

ক্যারোলিন বার্তোজ্জি click chemistry কে অন্য পর্যায় উন্নীত করেন। কোষের পৃষ্ঠে অবস্থিত গ্লাইক্যান (glycan) নামে একটা গুরুত্বপূর্ণ জৈব অনুকে ম্যাপ (map) করতে তিনি ক্লিক রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ (click reactions) তৈরি করেন, এই বিক্রিয়াগুলো জীবন্ত প্রাণীর দেহের অভ্যন্তরে কাজ করে। তাঁর বায়োঅর্থাগনাল রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো  (bioorthagonal chemical reactions), কোষের স্বাভাবিক রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত না করেই এই বায়োঅর্থাগনাল রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো কাজ করতে পারে।

বিভিন্ন রকম কোষ আবিষ্কার করতে এবং বিভিন্ন জৈবিক বিক্রিয়া চিহ্নিত করতে – বায়োঅর্থাগনাল রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোর ব্যবহার বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়েই। এখানেই শেষ নয়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলোর টার্গেট (target) উন্নত করতে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বায়োঅর্থাগনাল রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোর ব্যবহার শুরু করেছেন, এই ওষুধগুলো বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পরীক্ষারত।

বিজ্ঞানী ক্যারোলিন বার্তোজ্জি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত © Nobel Prize Outreach

ক্লিক রসায়ন এবং বায়োঅর্থাগনাল রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো – রসায়নের কার্যকারিতাকে এক অন্য যুগে পৌঁছে দিয়েছে, বলা যেতে পারে এগুলো মানবজাতির উন্নয়নে অন্যতম সফলভাবে ভূমিকা পালন করতে চলেছে।


~কলমে এলেবেলে দেবরুন 

Leave a Reply

free hit counter