জিওলজি জিওলজি !

প্রিয়জনদের শেয়ার করুন
59 বার লেখাটি পঠিত হয়েছে ~~~

কলমে জ্যোতির্ময় পাল 

—————————-

কি পড়ছিস? জুলোজি? ওহ, না? জিও, আচ্ছা আচ্ছা, মানে পৃথিবী? মানে ভূগোলের মতোই?

আমার সাথে জিওলজির পরিচয় সুদীপ্তা সেনগুপ্তের লেখা আন্টার্কটিকা বই থেকে। সেখানেই প্রথম পড়লাম ভূত্ত্বের গোড়ার কথা।  সাথে আরো একটা শব্দ জেনেছিলাম, স্ট্রাকচারাল জিওলজি (Structural Geology)।

যাদবপুরে যখন জিওলজিতে বিএসসি করার জন্য ভর্তি হলাম, এটাই ছিল আমার আত্মীয় পরিজনদের অভিব্যক্তি। বন্ধু মহলেও খুব পরিচয় ছিল না এই বিষয়ের সাথে। আমার সাথে জিওলজির পরিচয় সুদীপ্তা সেনগুপ্তের লেখা আন্টার্কটিকা বই থেকে। সেখানেই প্রথম পড়লাম ভূত্ত্বের গোড়ার কথা।  সাথে আরো একটা শব্দ জেনেছিলাম, স্ট্রাকচারাল জিওলজি (Structural Geology)। জানিনা কেন অদ্ভূত  ভালো লেগেছিলো ব্যাপার টা। সুদীপ্তা সেনগুপ্ত আন্টার্কটিকার বরফ, পাথর, পাহাড় মেপে ম্যাপ বানাচ্ছেন, ফিল্ড ওয়ার্ক করছেন বিশাল বরফের মহাদেশে, এই সব আমার মধ্যে একটা মায়াজাল তৈরী করেছিল। আমার পরিবার ছিল ভ্রমণ পিয়াসী। ছোট বেলা থেকে দার্জিলিং, রাজগীর, হরিদ্বার, কেদার বদ্রি, যোশীমঠের পাহাড় ভয়ঙ্কর আকর্ষণ করতো। মাধ্যমিক দেবার পর আমি ভেবেছিলাম ভূগোল নিয়ে পড়ব।  কিন্তু আমার ভূগোল শিক্ষক, সঠিক উপদেশ দিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে জিওলোজি পড়তে গেলে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান থাকা জরুরি। না হলে কোনো ভাবেই ভবিষ্যতে জিওলজি পড়া যাবে না। ভূগোল আর জিওলজি দুটো আলাদা বিষয়। উচ্চ শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে এই বিভাজন আরো স্পষ্ট। এমনকি, ভূগোল নিয়ে পড়াশুনো করে পরবর্তী কালে আমাদের দেশে ভূবিজ্ঞানের কোনো শাখা নিয়েও (যেমন ওশানোগ্রাফি বা ক্লাইম্যাটোলজি, ইত্যাদি) পড়াশুনো বা গবেষণা করার সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

 

আন্ডার গ্রাজুয়েট (স্নাতক) 

 

তাই সেই অঙ্ক, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি নিয়েই উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া।  ২০১০ সালে কলকাতা শহরে ৩ টি কলেজে জিওলজি পড়ানো হতো। আশুতোষ, প্রেসিডেন্সি, আর যাদবপুর। তখন প্রেসিডেন্সি কলেজে (ইউনিভার্সিটি হয় নি) ভর্তি হতে গেলে আলাদা পরীক্ষা দিতে হতো। যাদবপুরে মাধ্যমিকের অঙ্ক  আর ভৌতবিজ্ঞানের নম্বর এবং উচ্চমাধ্যমিকের অঙ্ক, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির নম্বরের ওপর ভর্তি হওয়া যেত। বা আশুতোষ কলেজে ভর্তি হতে গেলে কেবল মাত্র উচ্চমাধ্যমিকের অঙ্ক, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির নম্বর দরকার। এই সমস্ত ভর্তির পদ্ধতি এখনো খুব একটা পরিবর্তন হয়নি বলে মনে হয়।  কলকাতা শহরের বাইরে আরো বেশ কিছু কলেজে জিওলজি পড়ানো হয়।  হুগলির মহসিন কলেজ, রানীগঞ্জ কলেজ, দুর্গাপুর গভর্মেন্ট কলেজ, নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি এবং তার অধীনস্ত কিছু কলেজ। সমস্ত কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে তিন বছরের ব্যাচেলর্স কোর্স করানো হয়। প্রায় প্রতিটি কলেজে ভর্তি হতে গেলেই অঙ্ক, ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রি প্রয়োজন।

কলেজ বা ইউনিভার্সিটি ছাড়াও বিভিন্ন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটে জিওলজি নিয়ে পড়া যায়। তবে এখানে বিষয়ের নাম জিওলজি থাকে না, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। আর্থ সাইন্স, আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স (Earth and Environmental Science), আর্থ এন্ড ম্যাটেরিয়ালস সাইন্স (Earth and Materials Science) ইত্যাদি। জিওলজি বলতে সাধারণত পৃথিবীর পাথরের ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনো করা। জিওলজির কি কি বিষয় বস্তু আছে  সে নিয়ে উদ্দালক আগের একটা লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করেছে (https://www.elebele.org/2020/11/30/জি-ও-ল-জি-প্রথম-পর্ব/) [a]। আমি আর সেদিকে গেলাম না।  তবে বেসিক জিওলজির বাইরেও পৃথিবীবিজ্ঞানের বিস্তর পরিধি আছে। যেমন পৃথিবীর খুব গভীরে (১০০ কিলোমিটারের এর নিচে) কি রকম ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন হচ্ছে, সেগুলো জিওলজি দিয়ে বোঝা সহজ নয়। তার জন্য দরকার জিওফিসিক্স (Geophysics), মিনারেল ফিজিক্স (Mineral Physics), জিওডিনামিক্স (Geodynamics), আইসোটোপ জিওকেমিস্ট্রি (Isotope Geochemistry), প্যালিওক্লাইমেট (Paleoclimate) এর মতো বিষয়। কঠিন পৃথিবী (Solid Earth) ছাড়াও পৃথিবীর সমুদ্র সম্পর্কিত বিজ্ঞান বা  Oceanography এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান বা atmospheric science/ climatology ভূবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। পৃথিবীর বাইরেও অন্যান্য গ্রহ এবং গ্যালাক্সি সম্পর্কিত গবেষণা এখন ভূবিজ্ঞানের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এই বিষয়ের নাম প্লানেটারি সাইন্স (Planetary Science)। জিওলজি, জিওফিসিক্স, জিওকেমিস্ট্রি, প্যালিওক্লাইমেট, প্লানেটারি সাইন্স, ওশানোগ্রাফি এই সমস্ত বিষয় গুলো একে ওপরের থেকে আলাদা কিন্তু পরস্পর সম্পর্কিত। সমস্ত বিষয় গুলোকে সমপরিসরে এনে একটা সাধারণ নাম দেওয়া হয় আজকাল, যাকে বলে আর্থ সিস্টেম সাইন্স (Earth System Science)। সাধারণত এই বিষয়ের ল্যাব গুলো যথেষ্ট ব্যায় বহুল এবং দেশের অধিকাংশ কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে এই জাতীয় কোনো সুবিধা নেই। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট গুলোয় রিসার্চ ফান্ডিং বেশি থাকায় বেশ কিছু আধুনিক ল্যাব তৈরী হয়েছে, তাই জিওলজি ছাড়াও আরো কিছু বিষয় পড়ানো হয়। তাই ডিপার্টমেন্ট এবং কোর্স গুলোর নাম জিওলজি না রেখে আর্থ সাইন্স / ভূবিজ্ঞান (Earth Science/ Geoscience) রাখা হয়। তাতে সাবজেক্টের পরিধি আরো বিস্তৃত হয়।

যেকোনো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে গেলে আই আই টি এন্ট্রান্স এক্সাম (IIT-JEE) দিয়ে আসতে হবে।

যেকোনো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে গেলে আই আই টি এন্ট্রান্স এক্সাম (IIT-JEE) দিয়ে আসতে হবে।  ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট গুলোতে সাধারণত ৪ বছরের ব্যাচেলর্স (BS), এবং ১ বছরের মাস্টার্স (MS)। এই ৪ বছরের ব্যাচেলর্স কোর্সে প্রথম দু বছর বিজ্ঞানের সমস্ত বিষয় নিয়েই পড়তে হয়। কোনো কোনো ইনস্টিটিউটে হিউম্যানিটিসের কিছু কিছু কোর্স ও করতে হয়। তৃতীয় এবং চতুর্থত বছরে মেজর সাবজেক্ট হিসাবে আর্থ সাইন্স/ ভূবিজ্ঞান নেওয়া যেতে পারে। ৪ বছরের পর ১ বছর সময় দিলে এক সাথে Bs Ms ডিগ্রী নিয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট গুলো থেকে উত্তীর্ণ হওয়া যায়।

গ্রাজুয়েট (স্নাতকোত্তর)

যদি কলেজ বা ইউনিভার্সিটি থেকে কেউ ৩ বছরের ব্যাচেলর্স করে, আমাদের দেশে যার প্রথাগত নাম BSc, তারপর  আরো ২ বছর সময় লাগবে মাস্টার্স (MSc) করতে। দেশের কোন কোন ইউনিভার্সিটি এবং ইনস্টিটিউট থেকে ভূবিজ্ঞানের ডিগ্রী অর্জন করা যায়, তার একটি লিস্ট বানিয়েছিলেন ডঃ শুভ্রনীল মন্ডল: https://geoedu.weebly.com/career/geoinsti-india। এখানে দেশের ভূবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বিষয়ক সমস্ত দরকারি তথ্য পাওয়া যাবে।

কলেজ বা ইউনিভার্সিটি লেভেলের পর যদি কেউ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটে মাস্টার্স করতে চায়, তাহলে IIT – JAM পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। অনেক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটে শুধু মাত্র মাস্টার্স ডিগ্রী দেয়, কোনো ইনস্টিটিউট (যেমন IISER Kolkata) ইন্টিগ্রেটেড পিএইচডি ডিগ্রী দেয়। অর্থাৎ এই পরীক্ষা থেকে সরাসরি পিএইচডি এর এডমিশন হয়ে গেলো। আলাদা করে NET বা GATE  পরীক্ষা দেবার কোনো দরকার থাকবে না।

জিওলজিতে ব্যাচেলর্স করার পর অনেকেই একদম ভিন্ন রাস্তা ধরতে চায়। এরকম কিছু কোর্স আজকাল দেশে পড়ানো হয়। তাদের মধ্যে একটা রিমোট সেন্সিং এন্ড জিওইনফরমেটিক্স (Remote sensing and Geoinformatics) দেরাদুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং (IIRS, ISRO অর্গানাইজেশন) দুটি মাস্টার্স কোর্স চালু করেছে।

গ্রাডুয়েশনের পর চাকরি:

মাস্টার্স করার পরে অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী চাকরি করতে চায়। জিওলজি পড়লে, এক্ষেত্রে বেশ কিছু সুযোগ আছে। মাস্টার্স করার পর একটা বিপুল পরিমানে ছাত্রছাত্রী UPSC পরীক্ষা দেয় জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে  (GSI) চাকরি পাওয়ার জন্য।  সার্ভেতে চাকরি করা খুবই সম্মান জনক। UPSC ছাড়া, দ্বিতীয় অপসন GATE পরীক্ষা দেওয়া। GATE পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে, সেখান থেকে অনেক PSU এবং কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্ত কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া সম্ভব।  এই সব PSU এবং কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে Oil and Natural Gas Corporation (ONGC), Coal India Limited (CIL), Indian Oil Corporation Limited (IOCL),Bhabha Atomic Research Centre (BARC) for Atomic Minerals Directorate (AMD), National Hydroelectric Power Corporation (NHPC), Oil India Limited, National Aluminium Company Limited (NALCO), Mineral Exploration Corporation Limited (MECL). প্রতিবছর এই সব কটা কোম্পানী রিক্রুট করে তা নয়, তাদের ভেকেন্সির ওপর নির্ভর করে। তবে এখনো পর্যন্ত ONGC, BARC (AMD), IOCL মোটামুটি নিয়মিত ভাবে রিক্রুট করে।

সরকারি চাকরি ছাড়াও জিওলজি থেকে বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি পাওয়া সম্ভব। প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি পাওয়া যায় দুইভাবে। ইউনিভার্সিটি বা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসিং এর মধ্যে প্রধান উপায়।  জিওলজি বা আর্থ সাইন্স ডিপার্টমেন্টগুলোয় অনেক সময়েই প্রাইভেট কোম্পানি ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টে আসে। এদের মধ্যে অয়েল  এন্ড গ্যাস (Schlumberger, Shell India, ইত্যাদি), কিংবা মাইনিং সেক্টরের (Hindustan Copper Limited, Hindustan Zinc Limited, ACC, ইত্যাদি) কোম্পানি গুলো প্রধান।  জিওলজির কোম্পানি ছাড়াও জেনারেল কন্সালটেন্সি কোম্পানিগুলোর ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টে বসেও সরাসরি চাকরি পাওয়া যায়।  ক্যাম্পাসিংয়ে বাইরেও প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি পাওয়া সম্ভব। তবে কোন কোম্পানিতে কখন কিরকম জব ভেকেন্সি হচ্ছে সেটা জানার জন্য ভালোমতো নেটওয়ার্কিং লাগবে।

পিএইচডি / গবেষণা

GATE এর ফলাফল দেখিয়ে চাকরি বাদেও রয়েছে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। কিছু কিছু আইআইটিতে ভূবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার MTech করানো হয়, এবিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আবার সেই আর্কাইভ দেখতে বলবো

[b]। GATE স্কোরের ওপর নির্ভর করে MTech কোর্সে ভর্তি হওয়া যেতে পারে। MTech কোর্সে সরকারের তরফ থেকে মাসে ১২৫০০ টাকা করে ফেলোশিপ দেওয়া হয়। MTech ছাড়াও, বিভিন্ন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট গুলোতে পিএইচডি করা যেতে পারে GATE স্কোর দিয়ে। কিছু কিছু বিদেশের ইউনিভার্সিটিতে GATE স্কোর থেকে পিএইচডি এডমিশন নেওয়া হয় (যেমন Nanyang Technological University (NTU), Singapore )।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট বাদে অন্য কোথাও (ইউনিভার্সিটি লেভেলে)  পিএইচডি করতে গেলে NET কোয়ালিফিকেশন দরকার।  NET কোয়ালিফায়েড ছাত্রছাত্রীদের CSIR বা UGC থেকে প্রতিমাসে ৩৭০০০ টাকা করে ফেলোশিপ দেওয়া হয়। কম্প্রিহেনসিভ পরীক্ষার পর (সাধারণত পিএইচডি শুরু করার ২ বছর পর) ফেলোশিপ ৪২০০০ টাকা করে হয়।

অনেকেই দেশের বদলে বিদেশে পিএইচডি করতে চায়। স্বাভাবিক ভাবেই কিছু কিছু বিষয়ের এক্সপোজার এবং ফেসিলিটি বিদেশে অনেক ভালো। কি করে বিদেশে পিএইচডি করতে যেতে হয় সেটা ছোট করে বলা মুশকিল। এক একটা দেশের এক এক রকম নিয়ম। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করতে গেলে General GRE দিতে হয়। এই মুহূর্তে GRE ৩৪০ নম্বরের পরীক্ষা, যাতে ১৭০ নম্বর অঙ্ক এবং ১৭০ নম্বর ইংরেজি।  ৩৪০ এর মধ্যে অন্তত ৩০০ এর ওপর স্কোর এলে ভালো কলেজে পাওয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আইভি লীগের কলেজে (যেমন প্রিন্সটন, হাভার্ড, কলম্বিয়া, ব্রাউন এবং আরো কিছু ) ভর্তি হতে গেলে স্কোর প্রায় ৩৩০ এর ওপর দরকার হতে পারে। তবে আজকাল বহু বিশ্ববিদ্যালয় মনে করছে GRE একটি জাতিবৈষম্য মূলক পরীক্ষা [c]। কারণ, GRE এর ১৭০ নম্বরের যে ইংরিজি, তা মোটেও নন-নেটিভ ইংলিশ স্পিকার দেড় জন্য সহজ না। যে আমেরিকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করবে, তাকে ভাষার শেক্সপীয়ার হতে হবে না। এই কারণে, এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূবিজ্ঞানে গবেষণা করতে গেলে GRE পরীক্ষা দিতে হয় না। তবে, বেসিক ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট দিতেই হয়। এই টেস্ট অনেকগুলো হয়, তবে আমেরিকার জন্য সব থেকে বেশি একসেপ্টেড টেস্ট হলো TOEFL। অন্যদিকে, ইউরোপ বা ব্রিটেনে উচ্চশিক্ষার জন্য পারি দিলে IELTS বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে আজকাল TOEFL বা IELTS দুটোই প্রায় সর্বত্র গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেছে।

ইংল্যান্ডে পিএইচডি করতে গেলে ফেলোশিপ জোগাড় করা একটু কঠিন। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো একটা নূন্যতম বেতন দেয় পিএইচডি ছাত্রছাত্রীদের, ব্রিটেনের ক্ষেত্রে এই বেতন/ স্কলারশিপ পাওয়া আর একটু শক্ত, বিশেষ করে নন-ইউরোপিয়ানদের জন্য।  ব্রিটেনের কিছু ইউনিভার্সিটি স্পেসিফিক স্কলারশিপ আছে, যেমন ক্যামব্রিজের জন্য নেহেরু ক্যামব্রিজ ফেলোশিপ, অক্সফোর্ডের জন্য রোড্স্ ফেলোশিপ। সাথে আছে কমনওয়েলথ ফেলোশিপ যার সাহায্যে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করা যেতে পারে।  যদিও এই সমস্ত স্কলারশিপ গুলো ভীষণভাবে প্রতিযোগিতা মূলক।

ইউরোপে পিএইচডি করার ব্যাপারটা আরো একটু ফাজি। একমাত্র জার্মানিতে পিএইচডি করার বিশেষ স্কলারশিপ আছে, DAAD fellowship. এছাড়া বাকি সমস্ত দেশেই পিএইচডি করা গ্রান্ট এবং এডভারটিসিমেন্ট নির্ভর। খুব ভালো চেনা জানা থাকলে, কোন ল্যাবে নতুন পিএইচডি পসিশনের এডভার্সটিসমেন্ট আসছে সেই মতো এপলাই করতে হয়। তবে দেশে পিএইচডি করতে করতে ইউরোপের বিভিন্ন ল্যাবে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে যাওয়া যায়।  এদের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় হলো জার্মানির DAAD স্যান্ডউইচ প্রোগ্রাম, ফ্রান্সের Raman-Charpak ফেলোশিপ, সুইজারল্যান্ডের SERI, ব্রিটেনের Newton-Bhava ফেলোশিপ, আমেরিকার Fulbright এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম।

ইউরোপ বাদে এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া নিউ-জিল্যান্ডের দিকেও অনেকে পিএইচডি করতে যায়।  এগুলো অধিকাংশই কন্টাক্ট নির্ভর এবং কোনো জেনারেল এপ্লিকেশন নেই। সাধারণত প্রফেসরদের  ইমেইল করে জিজ্ঞাসা করতে হয় তার ল্যাবে কোনো ওপেনিং আছে কিনা, এবং তিনি নতুন পিএইচডি স্টুডেন্ট নিতে ইচ্ছুক কিনা। এইরকম পিএইচডি এপ্লিকেশন করতে গেলে মোটামুটি ৫০-১০০ ইমেইল করতে হয়, হয়তো ১০ জন তার মধ্যে প্রত্যুত্তর দেয়, এবং হয়তো ২-৩ জন পসিটিভ উত্তর দেয়। EarthWorks [d] বলে একটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে নিয়মিত ভাবে ভূবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জন্য পিএইচডি, রিসার্চ এবং চাকরির ভেকেন্সি পোস্ট করা হয়। ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত নজর রাখতে পারে।

পোস্টডক/পিএইচডি পরবর্তী গবেষণা

পিএইচডি এর পর আবার জীবনের ট্রান্সিশনের সময়।  অনেকেই এর পর একটা স্টেবল চাকরি খোঁজে। সাধারণত পিএইচডি হয়ে গেলে যেকোনো ইউনিভার্সিটি বা কলেজে অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হওয়া যায়। দেশের কলেজ ইউনিভার্সিটিতে চাকরি পেতে গেলে NET কোয়ালিফিকেশন প্রায় বাধ্যতা মূলক। রাজ্য অনুযায়ী কলেজ সার্ভিস এক্সামিনেশন হয়, যেখান থেকে সরকারি কলেজে চাকরি পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটিতে ভেকেন্সি এলে ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট তার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটে চাকরি পেতে গেলে পিএইচডি তে থেমে গেলে হবে না।  অধিকাংশ পুরোনো আইআইটি গুলোতে চাকরি পেতে গেলে এখন মোটামুটি ২-৩ বছরের পোস্টডক বাধ্যতামূলক হয়ে যাচ্ছে। তাও, সেটা বিদেশের এক্সপেরিয়েন্স হলে ভালো হয়।  বিদেশে পোস্টডক করা আরো প্রতিযোগিতা মূলক। বিভিন্ন দেশে, মহাদেশে কিছু কিছু ফেলোশিপ আছে, যাদের বলে প্রাইজড ফেলোশিপ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য Fulbright fellowship, কানাডার জন্য Banting fellowship, জাপানের জন্য JSPS fellowship, ব্রিটেনের জন্য Newton fellowship, জার্মানির জন্য Humboldt fellowship, নেদারল্যান্ডসের জন্য Veni, এবং সমগ্র ইউরোপরের জন্য Marie Skłodowska–Curie Fellowship। এই সমস্ত ফেলোশিপ ছাড়াও কেউ সরাসরি প্রফেসরদের ইমেইল করলে নতুন কোনো পোস্টডক পসিশনের জন্য আবেদন করতে পারে।

পিএইচডি করার পরে অনেকেই চাকরি করতে আগ্রহী হয়। সেখানেও আবার নির্দিষ্ট জব ভেকেন্সি অনুযায়ী এপলাই করতে হবে। দীর্ঘদিন একাডেমিয়াতে থাকার পর অনেকের অভিজ্ঞতা তিক্ত হয়ে যায়। বহু বহু ছাত্রছাত্রী পিএইচডি বা পোস্টডক করার পর একাডেমিয়া ছেড়ে অন্য কোথাও চাকরি করতে যায়। যদি কেউ সফ্ট স্কিল ডেভেলপ করে থাকে (যেমন প্রোগ্রামিং) তাহলে ব্যাঙ্কিং সেক্টর থেকে শুরু করে বহু কন্সালটেন্সি কোম্পানিতে সহজেই চাকরি পেতে পারে।  তবে সেটা জিওলজির বিষয়ের বাইরে। উল্টোটাও আছে, অনেকেই দীর্ঘ দিন ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করে একাডেমিয়াতে ফিরতে চায়।

পিএইচডি বা পোস্টডক করে ইউনিভার্সিটি, ইনস্টিটিউট ছাড়াও আরো একরকম জায়গায় চাকরি করা যায়, সেটা হলো সায়েন্টিস্টের চাকরি। দেশের বেশ কিছু রিসার্চ ল্যাব আছে, যেমন Physical Research Laboratory আমেদাবাদ, National Gophysical Research Institute হায়দরাবাদ, Wadia Institute of Himalayan Geology, দেরাদুন, National Institute of Oceanography, গোয়া, National Centre for Polar and Ocean Research, গোয়া ইত্যাদি [b]।  পিএইচডি বা পোস্টডক করার পর এই সমস্ত রিসার্চ ল্যাবেও চাকরি পাওয়া যেতে পারে।

একেবারে স্কুল থেকে শুরু করে পোস্টডক চাকরি পর্যন্ত আলোচনা দীর্ঘ। হয়তো অনেকেই  ছেড়ে দিয়েছে হাপিয়ে গিয়ে। তবে সমস্ত আলোচনাটা কেবল মাত্র জিওলজি বা ভুবিজ্ঞানের শাখার জন্য নয়, যেকোনো বেসিক সায়েন্স শাখার জন্যই কার্যকারী হতে পারে । নিচে কয়েকটা দরকারী লিংক দিয়ে রাখলাম, ভুবিজ্ঞানে উত্সাহী কেউ যদি এক ঝলকে জিওলজির সম্পর্কে জানতে চাইলে সুবিধা হবে।

Important Links:

  1. Different Geology disciplines: https://www.elebele.org/2020/11/30/জি-ও-ল-জি-প্রথম-পর্ব/
  2. List of Geoscience institutes in India: https://geoedu.weebly.com/career/geoinsti-india
  3. GeoGRExit: Why Geosciences Programs Are Dropping the GRE

https://eos.org/opinions/geogrexit-why-geosciences-programs-are-dropping-the-gre

  1. Find any jobs related to geoscience: https://www.earthworks-jobs.com

 

Uddalak Biswas

Senior Research Fellow, Department of Earth Sciences, IIEST, Shibpur, Howrah-711103

Leave a Reply

free hit counter
error

লেখা ভালো লেগে থাকলে দয়া করে শেয়ার করবেন।